শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ :
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে বিএনপি’র নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল আ. লীগের রাজনীতি করার বিষয়ে যে মন্তব্য করলেন নাহিদ ইসলাম যুক্তরাজ্যে ঢুকলেই গ্রেপ্তার হতে পারেন নেতানিয়াহু ব্রাক্ষণবাড়িয়া বিজয়নগরে মাদকসহ আটক ১ ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই : জামায়াত আমির দুই-এক বছর দেখতে চাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেঃ নুর মাহমুদুর রহমান সৎসাহস ও দেশপ্রেমের জীবন্ত প্রতীক: আসিফ নজরুল পর্তুগালে ইউএনএওসি গ্লোবাল ফোরামে যোগ দেবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা শাকিবকে জড়িয়ে ধরে ‘ইমোশনাল’ পরীমণি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নপূরণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধঃ ড. ইউনূস

টানা ৩ বার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য কলকাতায় খুন হওয়ায় শোকে মাতম

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি।
আমাদের সোনার জামাই কিভাবে চলে গেল।তার টাকা পয়সা সব কিছু নিয়ে যেত,আমাদের জামাইকে ফিরিয়ে দিত। কেন এভাবে নিয়ে গেল। সে তো কাউকে ক্ষতি করেনি। তাকে কেন মেরে ফেলা হলো। আমরা এর বিচার চাই। বুধবার দুপুরে এমপির বাস ভবনের নীচে এভাবেই বিলাপ করতে করতে বলছিলেন তার শাশুড়ি কালীগঞ্জ পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর বিনা খাতুন।পাশেই এমপি আনারের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সিড়িতে বসে বিলাপ করছিলেন, এমপি আনারের এক সহযোগী রুবেল হোসেন। তিনি বলেন, ভারত যাওয়ার আগে তার সাথে শেষ কথা হয়। এসম সে বলেছিল চেকগুলো তুলে রাখ। গরিব মানুষের চেকগুলো তুলে রাখ। আমি ফিরে এসে চেকগুলো সব একসাথে বিতরণ করবো। সে চলে গেল, এখন এভাবে কে গরিব মানুষের নিয়ে ভাববে। কে আর এভাবে কথা বলবে।ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ উদ্ধার করেছে ভারতের পুলিশ। ভারত যাওয়ার ১০ দিন পর বুধবার (২২ মে) সকালে কলকাতার নিউটাউন এলাকার  আবাসন সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে সে দেশের পুলিশ। তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আব্দুর রউফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ১২ মে রোববার দুপুরে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার চিকিৎসার জন্য দর্শনার গেদে বন্দর দিয়ে ভারতের কলকাতায় যান। আনার ভারতীয় সীমান্ত এলাকা ঝিনাইদহ-৪ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য (এমপি) ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
ভারতে তার মরদেহ উদ্ধারের সংবাদ পাওয়ার পর তার দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত শত শত মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এমপি আনার জেলার কালীগঞ্জ শহরের ভূষণ রোডস্থ বাড়িতে বসবাস করতেন। তার দুই মেয়ে স্ত্রী রয়েছে।
এমপির নির্বাচনী এলাকা কালীগঞ্জ উপজেলার ১নং সুন্দরপুর দূর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ওদু বলেন, আমরা তার মৃত্যু সংবাদ শুনে রাজনৈতিক কার্যারয়ের সামনে এসেছি। তার মৃতদে ভারতে পাওয়া গেছে। কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা বরতে পারছিনা। এমপির সাথে কারো কোন বিরোধ ছিল না। যা ছিল তা খুবই সামান্য কিন্তু তার জনপ্রিয়তা ছিল অনেক। তিনি বলেন তার পরিবার ঢাকাতে অবস্থান করবেন। তারা ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে রওয়া দিয়েছেন।  তারা আসলে আরো কিছু জানা যাবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে এমপির মরদেহ দেশে আনা হবে। আমরা এখন মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছি।জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, আমি টেলিভিশনে আনারের মৃত্যুর খবর শোনার সাথে সাথে তার বাসভবনে ছুটে আসি। এখানে এসে দেখি হাজার হাজার মানুষ আহাযারি করছে। আমি সকলের উদ্দেশ্যে বলবো এভাবে যারা আনারকে হত্যা করেছে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবী জানান তিনি।কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব হোসেন জানান,আমরা একজন নেতাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।যা আমরা কিছুতেই মানতে পারছিনা। এমপি আনার এর মতো একজন রাজনীতিবীদকে হারিয়ে কালীগঞ্জ বাসীর অপূরর্ণীয় ক্ষতি হয়েছে।সেখানে পৌছে পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার অন্তর্গত মন্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে ওঠেন। পরের দিন ১৩ মে ডাক্তার দেখানোর জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ১৫ মে বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাসের হোয়াটস এ্যাপে ম্যাসেজ করে জানান তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। ১৬ মে এমপির ব্যক্তিগত গাড়ি চালক তরিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত মুঠোফোনেও একটি ম্যাসেজ পাঠিয়ে জানান দিল্লি যাওয়ার কথা। এরপর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান আনোয়ারুল আজিম আনার। এরপর থকে পরিবার ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তাকে ফোনে বা কোনো মাধ্যমে না পেয়ে বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জানান উদ্বিগ্ন এমপি পরিবার। এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে ১৮ মে থানায় একটি মিসিং ডাইরি করেন এমপি’র পরিচিত ভারতের বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস।
আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা ৩ বার আওয়াামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দির্ঘ দশ বছর হলো তিনি এলাকার উন্নয়নে কাজ করছেন। সাংসদ হিসাবে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের জন্য তার বেশ সুনাম রয়েছে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের সাথে দেখা করে সমস্যা শোনেন ও সমাধান করেন। তিনি চলাচলের সময় কোন পুলিশ প্রটোকল ব্যবহার না করে একা একা চলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। সবথেকে আলোচিত বিষয় তার নির্বাচনী এলাকায় যে কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার বাড়িতে যান এবং শোকার্ত পরিবারকে শান্তনা দেন। এমনও হয়েছে তিনি একদিনে ১০ জন মৃত্যু ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে দেখা করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি পাঁচ মৃত ব্যক্তির জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছেন। যা দেশের একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে বিরল।

খবরটি শেয়ার করুন